History of IOM

আলহামদুলিল্লাহ ওয়াস সালামু আলা রসুলিল্লাহ। ওয়া আলা আলিহী ওয়া আসহাবিহী ওয়া মান ওয়ালাহ।

সহিহ বুখারীতে মানবজাতির রুহের জগৎ নিয়ে একটি হাদিস আছে। বলা হয় যারা রুহের জগতে পরস্পর মিলে-মিশে থাকে, বন্ধু হয়ে থাকে তারা যদি দুনিয়াতে ভিন্ন ভিন্ন মেরুতেও জন্ম নেয়, তবুও একদিন কোন না কোনভাবে ঠিকিই পরস্পর মুত্তাহিদ হয়ে যায়। এই দুনিয়ার জটিল রহস্যগুলো একমাত্র রব্বই অধিক ভালো জানেন।

এমনইভাবে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানের দুজন মানুস, যারা শিক্ষা-দিক্ষায়, পরিবেশে, শ্রেনীতে ভিন্ন করে রব্ব পাঠিয়েছেন, তবে অন্তরের সুপ্ত নিয়্যাতের উপর ভিত্তি করলে দেখা যাবে দুজনেই একই পথের মুসাফির। এই দুই মুসাফিরের মাধ্যমে রব্ব একটি ইল্মের মাকামকে কোথা হতে কোথায় পৌছে দিয়েছেন তার গল্প আজ লিখতে বসেছি……

ঐ আরশের রব্ব, যিনি সবাইকে নিয়ন্ত্রন করে চলেছেন তিনি শুধু অন্তরগুলোর নিয়্যাত দেখে বিচার করেন। যার সাথে যার নিয়্যাত মিলে যায়, সেই মানুসটির সাথে অপর মানুসটির মেলবন্ধনে সভ্যতায় বিপ্লব তৈরী করেন। সুবহানাল্লাহ! সেই বিপ্লবের গল্প আজ লিখতে বসেছি……

হেরা গুহায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর সর্বপ্রথম যে ওহি নাজিল হয় তা হচ্ছে- পড়ুন আপনার প্রতিপালকের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্তপিণ্ড থেকে। নিশ্চয় আপনার প্রতিপালক মহান দয়ালু। যিনি শিক্ষা দিয়েছেন কলমের মাধ্যমে। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে, যা সে জানত না। (সুরা: আলাক, আয়াত নং : ১-৫)

আজ থেকে বছর তিনেক আগেও অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসে, বাংলা ভাষাভাষী মানুসের জন্য দ্বীনশিক্ষাটা মুটামুটি অপ্রতুল ছিলো। মাজহাব-মানহাজ নিয়ে দলাদলির কারনে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা’আ-র তেমন নির্ভরযোগ্য প্লাটফর্ম পাওয়া মুশকিল ছিলো। মানুস ইউটিউব, ফেইসবুক থেকে ইল্ম শিখতো। যদিও দুটোর একটিও ইল্ম শেখার কোন অথেনটিক সোর্স নয়। ইল্ম শিখতে হয় মাসজিদ-মাদ্রাসাতে, আলেমদের সহবতে থেকে। ফলে দ্বীনশিক্ষার এসব জটিলতার কারনে এক ব্যক্তির ইচ্ছা হলো একটি অনলাইন মাদ্রাসাহ খোলার। যেটা হবে বাংলা মিডিয়াম, বাংলা ভাষাভাষী স্টুডেন্টদের জন্য সহায়ক, মুসলিম হিসেবে যেটুকু ইল্ম জেনে রাখা জরুরী তা হাসিল করতে পারবে, কোর্স ফি ও পেমেন্ট প্রসিডিউর সবার সাধ্যমত হবে যেনো যে কেউ চাইলেই ভর্তি হতে পারে। এবং মুসলিম সমাজের সব শ্রেণির মানুষ যেন দ্বীন মোতাবেক চলতে পারে এবং হারাম থেকে বেঁচে হালালভাবে জীবনযাপন করতে পারে, সে জন্য কোরআন-সুন্নাহে পারদর্শী একটি জামায়াত বিদ্যমান থাকা অপরিহার্য। কিন্তু নানা জটিলতায় ইচ্ছেটা পূরন হচ্ছিলো না।

তারপর ২০১৮ সালের কথা…..

গল্পের শুরুতে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানের দুজন মুসাফিরের কথা বলেছিলাম মনে আছে নিশ্চয়। জ্বি। তাদের একজন হলেন মুফতি জুবায়ের আহমাদ ও আরেকজন ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মারছুছ। মুফতি জুবায়ের আহমাদ একজন বিখ্যাত আলেম ও তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের উপর গবেষক এবং বিশিষ্ট দায়ী, যিনি তার দাওয়াতি কর্মপন্থা কাজে লাগিয়ে বহু অমুসলিমকে ইসলামের নূর দেখিয়ে মুসলিম হতে সাহায্য করেছেন, যার জবানের প্রতিটি শব্দ অন্তরে সুকূন ঢেলে দেয়, উম্মতের মাঝে দ্বীনের দরদকে জাগিয়ে তোলে। অন্যদিকে ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মারছুছ হলেন আইটি ইঞ্জিনিয়ারিং ও বিজনেস ম্যানেজমেন্টের উপর পোস্ট-গ্র‍্যাজুয়েট করা একজন শিক্ষিত মেধাবী মানুস, যার মস্তিষ্কে সর্বক্ষণ উম্মতের হিকমতের জন্যে নিত্যনতুন পরিকল্পনা, উদ্যোগ, কর্মপ্রচেষ্টা লেগে থাকে। নিজের জাগতিক জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে দ্বীনের বিপ্লব ঘটানো যায় সেই পরিকল্পনা চলতে থাকে। মা শা আল্লাহ। উভয়কে নিয়ে যত বলা যাবে কম হবে। উভয়ই আপডেট জেনারেশেনের মাঝে দ্বীনের ফিকির বাড়ানোর চিন্তায় সর্বদা মশগুল। দ্বীনি স্বার্থে তাদের এই উৎসর্গ আরশে আযীমে পৌছে যাক এই দুয়া সর্বক্ষণ।

এই দুটি নেক রুহের সম্মিলিত উদ্যোগে আজ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে Islamic Online Madrasah-IOM এর মত জনপ্রিয় প্লাটফর্ম। এই দুজন মানুসের শিক্ষাগত যোগ্যতা ভিন্ন ভিন্ন হলেও নিয়্যাত ও অন্তরের কোণে লুকায়িত তামান্নাগুলো ছিলো পুরোপুরি এক। নিঃস্বার্থে উম্মাহর মাঝে দ্বীনের দাওয়াহ প্রদান। রব্ব হয়তো ঠিক একারনেই দুজনের অবস্থানের ভিন্নতা রেখেছেন যাতে উভয়ের মেলবন্ধনে সোনায় সোহাগা করতে পারেন। যেকোন বয়সের, যেকোন শ্রেনী ও পেশার, যেকোন মাজহাব বা মানহাজের মানুসের দোরগোড়ায় যেন আল-ফুরক্বানের প্রতিটি বানী পৌছে যেতে পারে, হিদায়াতের বানীগুলো যেন দাওয়াতে রূপ নিতে পারে সেজন্য গঠন করা হয়েছে Islamic Online Madrasah-IOM নামে একটি অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থার। এটি মূলত দ্বীনের দাওয়াহ প্লাটফর্ম। IOM প্রত্যেকটি মতাদর্শের প্রতি সমানভাবে শ্রদ্ধাশীল। মাজহাব-মানহাজের কোন একটি নির্দিষ্ট দলকে প্রমোট করা এর উদ্দেশ্য নয়।


IOM প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মদীনার মাসজীদে নববীতে ১লা মহররম ১৪৪০ (১১-সেপ্টেম্বর-২০১৮) উদ্বোধন হয় (যদিও এই ওয়েবসাইটটি তৈরী করা হয়: ১৭-অক্টোবর-২০১৭)। আলিম কোর্সের সিলেবাস পরিকল্পনাও মাসজিদে নববীতে বসেই সম্পন্ন করা হয়েছিলো আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ পাকের এক বিশেষ অনুগ্রহ যে তিনি IOM এর সফরটা শুরু করেছিলেন সবচেয়ে পবিত্র সময়ের সবচেয়ে পবিত্র স্থান হতে! সুবহানাল্লাহ!

আমাদের মাদ্রাসার প্রথম ব্যাচ শুরু হয় ২০১৮ সালে। প্রথম ব্যাচে ভর্তি হন ১৩২ জন স্টুডেন্ট! যাদের মধ্যে ১৬/১৭ জন ছিলেন এমবিবিএস ডাক্তার, ২২ জনের মত ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার এবং বিভিন্ন দেশের স্টুডেন্ট ও ভর্তি হন আলহামদুলিল্লাহ!।

আলহামদুলিল্লাহ শুরুর দিক থেকে এখনো পর্যন্ত আমরা ভাই-বোনদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পেয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে আমাদের ৫টি ব্যাচ রানিং আলহামদুলিল্লাহ।

আল্লাহ পাকের অশেষ বারাকাতে আজ Islamic Online Madrasah-IOM ক্রমশঃ চলছে আলোর পাণে … তার নিজস্ব গতিতে … নিজস্ব আঙ্গিকে।

সর্বশেষে সকল প্রশংসা আল্লাহ সুবহানাহু তা’লার, যিনি আমাদের দ্বীনি ইল্ম অর্জনের জন্য এতবড় সুযোগ করে দিয়েছেন, IOM কে প্রতিটি নেক রূহে মহব্বতের জায়গা বানিয়ে দিয়েছেন। যে রুহগুলো দ্বীনি ইল্মের তালাশে চাতকপাখির ন্যায় বিচরন করে বেড়ায়, দলাদলি থেকে সম্পূর্ণ দূরে ও হকপন্থী কোন প্লাটফর্ম তালাশ করে, তাদের তৃষ্ণা মেটাতে সুকূনের সাগরে রূপ নিয়েছে আমাদের IOM. IOM এখন ত্বলিবে ইল্মদের কাছে একটি ভালোবাসার নাম।

মহান আল্লাহ পাক এই একাডেমীকে বৃহৎ হতে আরো বৃহত্তরে রূপান্তরিত করুন, এবং এই মহান কাজের  পিছনে যারা যারা খিদ্মতে আছেন তাদের সকলকে উত্তম জাযা দিন, সকলের সদকায়ে জারিয়াহর পথ উন্মুক্ত করে দিন ও সকলকে তার দ্বীনের পথে কবুল করে নিন। আমীন।